কন্টেন্ট এড়িয়ে যাও

যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দেখতে সিসিআই-এর পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর দেশটি থেকে তুলা আমদানিতে বিষবাষ্প ব্যবহার সংক্রান্ত শর্ত প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের (সিসিআই) পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল গত বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। এই সফর ও একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের (ইউএসডিএ) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে দেওয়া বিষবাষ্প ব্যবহারের শর্ত শিথিল করার ব্যাপারে রাজি করানো গেছে।

এতে করে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিতে একটা বড় বাধা কাটল। এ ছাড়া বাংলাদেশি কারখানাগুলোও উৎপাদনের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী তুলা আমদানির জন্য মুখিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার ওপর আরোপিত অপ্রয়োজনীয় এই বিষবাষ্প সংক্রান্ত শর্তের কারণে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর প্রতি বছর ১০ লাখ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ বাড়তি খরচ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অ্যানিমেল অ্যান্ড প্ল্যান্ট হেলথ ইন্সপেকশন সার্ভিস (এপিএইচআইএস) থেকে নিরাপদ পণ্যের যে সনদ দেয়, দেশটির রপ্তানিকারকেরা তা ব্যবহার করা অব্যাহত রাখবেন। আবার নতুন নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা তুলার বেলে কোনো জীবন্ত বোল উইভিল নেই তা ওই সনদেই আলাদাভাবে উল্লেখ করা থাকবে। রপ্তানিকারকদের বিষয়টি নিয়ে নতুন নির্দেশনা জানিয়ে দেবে এপিএইচআইএস।

যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দেখতে সিসিআই-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার পরই বাংলাদেশের কৃষি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে বিষবাষ্পের শর্ত প্রত্যাহারের কথা জানায়। ন্যাশনাল কটন কাউন্সিলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল টেনেসি, মিসিসিপি ও টেক্সাসে মার্কিন তুলা বিষয়ক বৈঠকে অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাঁরা। তুলার বাগান, তুলা তৈরি করার কারখানা ও গুদামঘর পরিদর্শন করেন তাঁরা। এ ছাড়াও প্রতিনিধিদল মিসিসিপির স্টোনভিলে ইউএসডিএ-এর এগ্রিকালচারাল জাইনিং রিসার্চ ল্যাবরেটরিও পরিদর্শন করেন।

এর মধ্য দিয়ে প্রতিনিধিদল দেখতে ও বুঝতে সক্ষম হন যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় জীবিত বোল উইভিল থাকে না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তুলা খাতের নেওয়া বোল উইভিল নির্মূল কর্মসূচির সফলতার প্রমাণ এবং তুলা চাষ ও তন্তু থেকে তুলা তৈরির কৌশলগুলো দেখার সুযোগ পান। এ ছাড়া টেনেসির করডোভায় এনসিসির সদর দপ্তরে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় এপিএইচআইএসের সঙ্গে নিরাপদ পণ্য ও এর সনদপ্রদান প্রক্রিয়া এবং টেক্সাসের হারলিনজেনে টেক্সাস বোল উইভিল নির্মূল কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়।

মিসিসিপিতে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা স্ট্যাপলকোথের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্ট্যাপলকোথ হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান যারা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার শীর্ষসারির রপ্তানিকারক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল একটি তুলা তৈরির মেশিন ও একটি গুদামঘর পরিদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদক স্লেজ টেইলর তাদের পারিবারিক তুলার বাগান ও তুলা তৈরির কারখানায় প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদকেরা টেকসই পদ্ধতিতে তুলা উৎপাদনে যা করেন সেসব পর্যালোচনা প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরা হয়।

গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল অফিস (এফএএস) থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী তুলা আমদানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে বাংলাদেশে তুলার তেমন উৎপাদন হয় না। বাংলাদেশের তুলার যে চাহিদা তার মাত্র ১ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার দশম বৃহৎ ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ। এ বছর বাংলাদেশে ৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

(https://www.fas.usda.gov/regions/bangladesh)